সমাচার প্রতিবেদক\ আর মাত্র ৭ দিন পর শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজাকে আরও উৎসবমুখর করতে নরসিংদীর পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দেবী দুর্গাকে সাজাতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলার প্রতিমা কারিগররা। শত কষ্টের মধ্যেও মা দুর্গাকে সাজাতে পেরে কিছুটা প্রশান্তি পাচ্ছেন এসব কারিগররা।কথিত আছে মা জাতি হলো জগত জননী। যিনি নিরবে বিশ্ব জগতের সকল মানব সন্তানের সকল কিছু উপলব্ধি করতে পারেন। তাই বিশ্ব সংসারে তিনি মা দেবী দুর্গা বলে আখ্যায়িত হয়েছেন। আসছে ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মÐপে মÐপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা শিল্পীর তুলির আঁচড়ে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে মা দুর্গার। প্রতিমা কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই। এবার নরসিংদী জেলায় সর্বমোট ৩৩০ টি মÐপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বেশ কয়েকটি পূজা মÐপ ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। দিন রাত প্রতিমা শিল্পীরা কাজ করছেন। খড় আর কাঁচামাটি ও রংয়ের কাজ শেষে এখন নানা সাজসজ্জ্বায় দেবী দুর্গা, সরস্বতী, ল²ী, কার্ত্তিক ও গণেশসহ সকল দেবতাদের বর্ণিল করে তোলার কাজ চলছে। দুর্গাপূজাকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদভাবে সম্পন্নের লক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
টাঙ্গাইলের প্রতীমা শিল্পী সঞ্জিত পাল দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ নরসিংদীতে প্রতিমা তৈরীর কাজ করে আসছেন। তিনি জানান, পূর্বে যে মূর্তি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো, এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবছর প্রতিমা তৈরী করা হলেও রং, বাঁশসহ প্রতিমা তৈরীর আনুসাংগিক জিনিসপত্রের নাম অনেক বেশী। একটি প্রতিমা তৈরী করতে ৩/৪ জন কারিগর মিলে একটি প্রতিমা তৈরী করতে কমপক্ষ ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। সে হিসেবে অনেক খরচ বেশী হলেও বিক্রি করতে হয় কমদামে। তিনি নরসিংদী শহরের বিশ^কর্মা প্রতিমা শিল্পালয়ে এ পর্যন্ত ৪২টি প্রতিমা তৈরী করছেন।
গতকাল শনিবার নরসিংদী জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নরসিংদী পৌরসভা মিলনায়তনে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক আলাচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা বিএনপির আহবায়ক ডাকসুর সাবেক জিএস নরসিংদী সদরের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নরসিংদী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মন্জুর এলাহী, নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য দীপক কুমার প্রিন্স, বিএনপি নেতা মোহসিন হোসেন বিদ্যুৎ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।খায়রুল কবির খোকন বলেন, জেলায় শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরণের সুযোগ বিধি এবং আইনগত সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি নির্বিঘেœ পূজা উযদপানের জন্য সংশ্লিষ্ট পূজা মÐপ, মন্দির কমিটি ও পূজারুদের প্রতি আহবান জানান। নরসিংদীতে প্রায় ১৯টি প্রতিমা শিল্পালয় গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে নরসিংদী শহরে ছয়টি, সদর উপজেলার পাঁচদোনায় চারটি, শিবপুরের যোশরে তিনটি, পলাশে দুটি, রায়পুরায় দুটি ও মনোহরদীতে দুটি প্রতিমা শিল্পালয় রয়েছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও মৃৎশিল্পীরা চুক্তিতে এসব প্রতিমা শিল্পালয়ে কাজ করছেন।
মৃৎশিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিমার সৌন্দর্য। মানে ভালো ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। এবছর নরসিংদী জেলায় ৩৩০ টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৯৬ টি, শিবপুরে ৬৭ টি, রায়পুরায় ৫৮ টি,মনোহরদীতে ৪৬ টি, পলাশে ৪২ টি এবং বেলাবোতে ২১ টি। উল্লেখ্য, এর মধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ৩৩ টি এবং মাধবদী পৌরসভার ৯ টি পূজা মন্ডপ রয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী ইতিমধ্যেই জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও মন্দির কমিটির লোকদের নিয়ে নির্বিঘেœ পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে একাধিক সভা করা করেছেন। পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল হান্নান জানান, শারদীয় উৎসবকে নির্বিঘœ করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি আনসার ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।